আশুলিয়ায় ভুয়া মেজর গ্রেফতার, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের সাথে প্রতারণা!

নিজেকে সেনা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চাকরি দেয়ার নামে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে এক ভুয়া মেজরকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪) এর একটি দল। শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে অভিযান চালিয়ে সাভারের ব্যাংক কলোনী এলাকা থেকে ওই ভুয়া মেজরকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত ভুয়া মেজর পরিচয়দানকারী মো. জাহিদ ওরফে সুমির (২৩) টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি থানাধীন অস্তিপাড়া গ্রামের খায়রুল ইসলামের ছেলে। গ্রেফতার কালে তার দেহ তল্লাশি করে ২টি মোবাইল সেট ও একটি মানিব্যাগ জব্দ করা হয়।

র‌্যাব জানায়, চাকরি দেয়ার নামে আর্থিক প্রতারণার বেশ কিছু তথ্য র‌্যাবের কাছে আসার পর র‌্যাব-৪ এর একটি দল বিষয়টি নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে। তদন্তের পর অভিযান চালিয়ে এই প্রতারককে আটক করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তারা আরও জানান, প্রথমে ফেসবুকে নিজেকে মেজর সাজিয়ে টার্গেট করে মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে জাহিদ। কাউকে চাকরি বা নানা সুবিধা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন মেয়েদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার পর নানা কায়দায় টাকা হাতিয়ে নেয় সে। এখানেই শেষ নয়, নিজ স্ত্রী মেঘলাকে বোন সাজিয়ে স্বশরীরে বিভিন্ন মেয়ের পরিবারের কাছে হাজির হয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছেন। কোন মেয়ে হিন্দু পরিবারের হলে, নিজেকে হিন্দু ধর্মালম্বী বলেই পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলো এই ভুয়া মেজর জাহিদ ওরফে সুমির। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করে আশুলিয়া থানায় সোপর্দ করা হয়।

ভুক্তভোগী নারী জানান, ফেসবুকে পরিচয়ের এক পর্যায়ে নিজেকে মেজর বলে পরিচয় দেয় জাহিদ। পরে আমাকে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রথমে ৩০ হাজার টাকা নেয়। তার কিছুদিন পর মেডিকেল টেস্ট করানোর জন্য আরো ৪ লাখ টাকা নেয় সে। তবে দীর্ঘ দিন কেটে গেলেও চাকরির কোন খবর নেই। পরে হঠাৎ একদিন বাসায় উপস্থিত হয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং নিজেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে জানান। এছাড়াও তার বাবা পুলিশ কমিশনার দেশের বাইরে অবস্থান করছে ও মা মানসিকভাবে অসুস্থ বলে জানান। তাই মেঘলা নামে এক নারীকে নিজের বোন পরিচয় দিয়ে বিয়ের কথা বলে। গত বছরের ২৫ নভেম্বর হিন্দু ধর্মীয় রিতিনীতি অনুসারে মন্দিরে গিয়ে সাত পাকে ঘুরে বিবাহ হয় আমাদের। ওই নারী আরও জানান, সাভারে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকি। জাহিদ মাঝে মধ্যে রাতে আসতো, আবার ভোরে চলে যেতে। এরমধ্যে আমি জানতে পারি, জাহিদ ভূয়া মেজর এবং সে মুসলিম ধর্মাবলম্বী। এছাড়া সে প্রতারণা করে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিয়ে করেছে ও বিভিন্ন মেয়েদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও জানান ভুক্তভোগী নারী।

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম জানান, ভূয়া মেজর জাহিদকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরে বিজ্ঞ আদালত আসামীকে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে ভুক্তভোগী নারী ও পরিবার যোগাযোগ করছেন এবং তাদের প্রতারিত হওয়া ঘটনা তুলে ধরছেন। পাশাপাশি এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত জাহিদের স্ত্রী মেঘলাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আপনি আরও পড়তে পারেন